“আম ডালে মহুল ডালে ছামড়া ঘেঁরেছে হামদের ঘরের ছুটু মুনু লগনে বঁসেছে ও মুনু কাঁদিস কেঁনে রে.....?? বাজ বাজনাই বর আইসবেক যাবেক তকে নিঁয়ে”- লোক কবি সুভাষ মাহাত আইখান দিন (পয়লা মাঘ) থেকে আমার অনেক ভাই-দাদা কইনা দেখা শুরু করেছেন। বোন-দিদিরা প্রস্তুতিপর্ব শুরু করে দিয়েছেন। বিয়ের কথা শুনলেই ছেলে-মেয়েদের মনে লাড্ডু ফোটে। ফোটাটাই স্বাভাবিক কারণ বিয়ের মাধ্যমেই মানুষ তার বাকীটা জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী খুঁজে পায়। খুঁজে পায় তার বাকীটা জীবন পথের নির্ভরযোগ্য সফর সঙ্গী। তার উপর আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলা,সুস্বাদু খাওয়া-দাওয়া এবং সাঁজু-গুজু করে প্রচুর ছবি তোলা সব মিলিয়ে বিয়ে আমাদের জন্য আনন্দ উপভোগের অন্যতম একটা মাধ্যম। কিন্তু এই বিয়েই আবার কারো কারো জন্য কষ্টকর,হতাশাগ্রস্ত এবং অস্বস্তিকর হয়ে উঠে। আর এর প্রধাণ কারণ হলো বিয়ের সব অদ্ভুত নেগাচার (নিয়ম কানুন)। যার জন্য অনেকে নিজের আভিজাত্য ও লোকদেখানোর জন্য পূর্ব পুরুষের নেগাচার ছেড়ে ব্রাহ্মন্যবাদের স্মরনাপন্ন হন। কিন্তু কখন যে আপনারা নিজের পূর্বপূরুষদের অসম্মান করছেন সেটা আপনারা বুঝতেই পারেন না। লোকমুখে শুনেছি “নান্নিমুক শ্রাদ্ধ” যা হিন্দুরা বিয়ের আগে কূল দেবতা ও পুর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে করেন তাদের শান্তি ও পারমিশান নেওয়ার জন্য। এবার বলুন তাদের দেখানো পথ পরিত্যাগ করে, তাদের সৃষ্ট নেগাচার ছেড়ে তাদেরকে অসম্মান করার পর পারমিশান চাইতে লজ্জা করে না কি??? তাঁরা হয়তো আপনাকে আশির্বাদ করবেন কিন্তু আপনি তাঁদের কি দিলেন বিনিময়ে??? কিছুনা উল্টো ব্রাহ্মন দক্ষিনা নিয়ে চম্পট। আদিবাসী কুড়মি সমাজের “সার সাগুনে বিহা” অর্থাৎ ষোলটি বিশেষ নেগাচার দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর পক্ষ এবং কইনা পক্ষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । প্রাচীন ভারতের আদিম অধিবাসী কুড়মি সমাজে বিয়ের ধরন দেখে বিভিন্ন প্রকারে বিন্যাস করা হয়েছিল। এর সবকটি ছিল সম্পূর্ণভাবে নেগাচার ভিত্তিক। তাতে কোন প্রকার মন্ত্রোচ্চারণ বা যাগযজ্ঞের প্রয়োজন হতো না। ভারতের ছোটনাগপুর,আসাম রাজ্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বসবাসকারী কুড়মি জাতি এত ঝড় ঝঞ্ঝা সহ্য করে আজো তাদের নেগাচার মিটাতে পারেনি আর আমরা যদি সচেতন হই আর কোনোদিন পারবেও না । বৈদিক আচারগুলির সঙ্গে নেগাচারগুলির দুর দুর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই। অতীতে কুড়মি সমাজে বাল্যবিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল।শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যেহেতু বাল্যবিবাহ রোধ করা যায়নি তাই বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ। বর্তমান কালে পরিণত বয়সেই বিবাহ প্রথা প্রচলিত। তবে বিবাহে পণপ্রথা এখনও বহুল প্রচলিত যদিও কুড়মি সমাজে কন্যা পন আছে। কন্যাপক্ষের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে তারা পাত্রকে কোন উপহার সামগ্রী দেবে কিনা। আসুন বিয়ের প্রকাভেদ একটু জানি। কুড়মিদের বিয়ে কয় প্রকার ====================
এবার আসুন শুধু এক্ষেত্রে সাম্যবাদ কতটা তাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ছামড়া বাঁধা> গাঁয়ের পুরুষরা। মাড়ুয়া গাড়ে> অবিবাহিত ভাই। মাড়ুয়া পূজা> বর বা কনের পিতা। লগন বাঁধা> দাদু। হলুদ তেল মাখা> গাঁয়ের মহিলারা। সাজনি সাজা> গাঁয়ের পুরুষরা। বাহির ভিতর> বৌদি। আলতা পিঁধা> লাপিত। কাখনা বাঁধা> জামাই দা। আমল খায়> মা মাসীরা। চৈখ পুরায়> পিসি। বাজ বাজনা> ডম। সিনই কুটুম> সাঁওতাল বা অন্য ভ্রাতৃপ্রতিম জাতি। গুয়া টিকা ও ডুভা বদল> কাকা। সিনই বদল ও সিঁদরা দান> বর কনে। শালা ধুতি> শালা। আমলঅ পানি> বোন বা দিদি। চুমান> মায়েরা। লগদিন> মামাদিদি। আগুড় লাগা/ গড় ধূয়া> বহিন/ভাই। গরাম ঠাকুরের দায়িত্বে> লায়া। একটা বিয়েবাড়িতে সবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কুড়মিরাই সমাজবদ্ধ জিবন শুরু চরেছিল এর থেকেই প্রমানিত। আসুন গর্ব করে স্বমূর্তি ধারন করি। ব্রাহ্মণ বর্জিত বিয়ে করে আত্মিয় স্বজন সহ পাড়ার সকলকে নিজের আনন্দের শরিক করে সকলের আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা নিয়ে নতুন জীবন শুরু করুন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার “জনজাতি পরিচিতি” - লক্খীকানতঅ মুতরুআর মাহাত অনলি গ্রুপ। আদিবাসী কুড়মি সমাজ যারা এবছর বিয়ে করছেন তাদেরকে আদিবাসী কুড়মী সমাজের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা। আগামী জীবন সার্থক, সুখের এবং মধুময় হোক। জহার
plz send a wedding card in begali
ReplyDelete